Thursday 17 October 2019

রাস্তার মোড়ে - অমর প্রেমের গল্প || Free Download || Premer Golpo

Malancha Abitty Sanstha Blogs


রাস্তার মোড়ে


“কিরে.........কেমন আছিস ?”
আচমকা প্রশ্নটা কানে আসায় পিছন ফিরে তাকাল সৌরভ । কিছুটা চেনা চেনা লাগলেও পুরোপুরি চিনতে না পারায় কি উত্তর দেবে বুঝতে পারল না সে । তার মুখের অভিব্যক্তি দেখে হয়তো তার মনের ভাবটা আন্দাজ করেই সুচিত্রা তার পরের প্রশ্নটা করল, কি চিনতে পারলিনা বুঝি ? এর পরেও চুপ থাকাটা অভদ্রতামি ভেবে সৌরভ বলল, “না.....মানে কিছুটা চেনা চেনা লাগছে তবে.......”।

“তোর তোতলামো স্বভাবটা গেলনা দেখছি”, মুচকি হেসে বলল সুচিত্রা । “যখন কলেজে পড়তিস তখনো স্যার কোন প্রশ্ন করলে এভাবেই তোতলাতিস, মনে পরে ?” হাসতে হাসতে বলল সুচিত্রা । কথাটা শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়েই সুচিত্রার মুখ থেকে চোখ সরাল সৌরভ । বাবাঃ !! আবার লজ্জা পেতেও শিখেছিস দেখছি!!” বলতে বলতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সুচিত্রা । “তা কেমন আছিস ?” হাসি থামিয়ে বলল সুচিত্রা । “ভালই আছি“, অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর টা দিল সৌরভ ।

এরপর তাকে আপনি বলবে নাকি তুমি নাকি তুই এ কথা ভাবতে ভাবতে পরের প্রশ্নটা আর করতে পারলনা সৌরভ । “আমি কেমন আছি জানতে চাইবিনা ?” আচমকা সুচিত্রার প্রশ্নটায় একটু চমকে উঠল সৌরভ ।“ হ্যাঁ .......মানে ........আমি...... জিজ্ঞাসা করতে জাচ্ছিলাম.......”  তখন শুধুমাত্র এটুকু শব্দই বেরোল সৌরভ এর গলা দিয়ে । “থাক থাক জানি কত জিজ্ঞাসা করতিস “, অভিমান এর সুরে বলল সুচিত্রা । “ভালই আছি। ছেলে-মেয়ে-স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই আছি“, একটু জোর গলাতেই বলল সুচিত্রা । মুখে ভালো আছি গলা চড়িয়ে বললেও তার চোখে একটু হতাশার অনুভুতি লক্ষ করলো সৌরভ । এরপর কিছুক্ষন নীরব হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল দুজনে । নীরবতা ভাঙল সুচিত্রার কথায়; মুখের হতাশার ভাবটা লুকিয়ে সুচিত্রা একটু বাঁকা হাসি হেসে বলল , “অনেক বুড়ো হয়ে গেছিস তো রে ! মাথায় একটু টাক-ও তো পরেছে দেখছি “ উত্তরে সৌরভ কেবল একটু অসস্থিকর হাসি হাসল । সেদিকটা লক্ষ করেই সুচিত্রা বলল , “তা শরীরের আর দোষ কি ! সময় এর সাথে সাথে শরীরেরও তো বয়স হয় । এই যে আমাকে তুই চিন্তেই পারলিনা ! তার মানে আমিও আর আগের মতো নেই, আমার শরীরেরও সময় এর সাথে সাথে আমুল পরিবর্তন হয়েছে , নাহলে যাকে দিনে-রাতে চোখে হারাতিস তার মুখটা কি এতো সহজে ভুলে যেতে পারতিস !!”



কথাগুলো বলতে বলতে সুচিত্রার মুখে লুকোনো সেই হতাশার অনুভুতিটা আবার প্রকট হয়ে উঠল । নিজের লুকোনো অনুভূতিটা সৌরভ এর সামনে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে বুঝে পরিবেশ পরিবর্তন এর জন্য কিছুটা জোর করেই মুখে হাসি এনে সুচিত্রা বলল, “কলেজের শেষ দিনে তুই আমার থেকে একটা জিনিস চেয়েছিলি, কিন্তু সেদিন আমি তোকে উপেক্ষা করে তোর সাথে কফি খেতে যাইনি । আজ তোর সেদিন এর ইচ্ছাটা পূরণ করতে ইচ্ছা হচ্ছে । চল এক কাপ কফি খেয়ে আসি ।

সুচিত্রার এই প্রস্তাবের উত্তরে সৌরভ বলল, “মানে........আসলে......হয়েছেকি.....আমার স্ত্রী আজ একটু মাংস........”, কথাটা শেষ করতে হলনা সৌরভ কে । এটুকু শুনেই সুচিত্রা একেবারে হো হো করে হেসে উঠে হাত নাড়াতে নাড়াতে বলল ,”থাক থাক বুঝেছি , তুই নয় তোর গিন্নিই বাড়ির আসল কর্তা । যাক ছাড়, সেদিন আমার কাছে সময় ছিলনা আজ তোর কাছে সময় নেই । আসি রে । আবার যদি কোনোদিন দেখা হয় কোনো রাস্তার মোড়ে সেদিন চিনতে পারবি তো তোর তিরিশ বছর আগের সূচি কে ?” নাম টা কানে যেতেই সৌরভ এর মনের কোনো এক গোপন কোনে পড়ে থাকা তিরিশ বছর আগের সমস্ত ধুলো পড়া স্মৃতি ধুলো ঝেড়ে জ্বলজ্বল করে উঠল । হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অচেনা মুখটিতে একটা অতি-পরিচিত মুখের ছাপ লক্ষ্য করলো সৌরভ । তিরিশ বছর আগে মনের যে ঘরটিতে সৌরভ তার ভালবাসার সব স্মৃতি গুলো তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল , আচমকা  সেই ঘরটি খুলে গেল । সৌরভ এর মনেপড়ে গেল তার কলেজের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা । কলেজের বাগানে দেখা সেই চঞ্চল ছোট্টখাট্টো মেয়েটির কথা। যার চঞ্চলতাটা প্রথম দেখাতেই সৌরভ এর মনে ভালবাসার ফুল ফুটিয়েছিল । সেদিনের সেই চুড়িদার পরা চঞ্চল মেয়েটি আজ তার সামনে শাড়ি পরে শান্ত মুখে দাড়িয়ে । কোন হারানো জিনিস খুঁজে পেলে যতটা  আনন্দ হয় , হয়তো তার থেকেও একটু বেশি হল সৌরভ এর । যার ছাপ পড়ল তার মুখের অভিব্যক্তিতে । হয়তো বয়সের কথাটা মাথায় রেখেই নিজেকে একটু সংযত করে নিয়ে প্রশ্নটা করলো সৌরভ ,”তুইতো অনেকটা বদলে গেছিস !” সৌরভ এর মুখের ভাবটা লক্ষ্য করে , তার প্রশ্নের উত্তরে সুচিত্রা বলল ,”যাক , নামটা মনে রেখেছিস তাহলে !



Malancha Abitty Sanstha Blogs

A Romantic True Love Story - Bangla Premer Golpo


হ্যাঁ বদলেছি , ওই যে বললাম সময়ের ছাপ পড়েছে শরীরে”। “শুধু শরীরেই পড়েছে ? মনে পড়েনি ?” নিজের অজান্তেই কথাটা সৌরভের মুখ থেকে বেরিয়ে গেল । “মানে ?” চমকে উঠে বলল সুচিত্রা । তার অজান্তে বলা কথাটা পরিবর্তনের জন্য , হাসতে হাসতে সৌরভ বলল ,”না আসলে স্বভাবও অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি , আগে তো এতো গুছিয়ে কথা বলতিসনা ! তা কে শেখাল , স্বামী ?” হাসির মাঝেও একটু অভিমান প্রকাশ পেলো সৌরভ এর গলায় । সেটা অনুভব করেই সুচিত্রা তার চোখদুটো সৌরভ এর চোখ থেকে সরিয়ে নিল । অন্যদিকে তাকিয়ে একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বলল ,”স্বামী ! হ্যাঁ সে অনেককিছুই শিখিয়েছে । তবে শান্ত হওয়া আর মেপে কথাবলাটা শিখেছি অন্য দুজনের কাছ থেকে । আসলে জীবনের পথে এই দুটি শিক্ষক সবাই পায় । পরিস্থিতি আর সময় সকলকেই শিখিয়ে দেয় , তার পরিবেশ কে কিভাবে মানিয়ে নিতেহয়  আমাকেও দিয়েছে ।“


কথাগুলো শুনে সৌরভ একটু আবেগের সুরে বলল ,”তার মানে ? তার মানে তুই কি ভালো নেই ? তুই কি তবে মানিয়ে নিয়ে আছিস ?” হাসতে হাসতে সুচিত্রা বলল ,”কে মানিয়ে নিয়ে নেই বলতে পারিস ? এই যে তুই , জন্ম কুঁড়ে । লিখতে হবে ভয়ে কোনোদিন আমাকে একটা প্রেমপত্র লিখিসনি , মুখে বলেই কাজ সেরেছিলি । তাকে কিনা তিরিশ বছর পরে রাস্তার মোড়ে বাজারের থলি হাতে দেখছি । তুই মানিয়ে নিসনি ? প্রতিটা মানুষকেই মানিয়ে নিতে হয় । কারণ মানুষ না বুঝে কিছু ভুল করেফেলে , যার ছায়া তার পরবর্তী পুরো জীবনের উপর প্রভাভ ফেলে ।“ সুচিত্রার কথাগুলো আবার নিরবতার পরিবেশ তৈরি করলো সৌরভ আর সুচিত্রার মাঝে ।


কিচ্ছুক্ষণ নিরবতার পর মাটির দিকে তাকিয়ে সৌরভ ধীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো , “ আক্ষেপ হয় ?” একটা কষ্ট চাপা হাসি হেসে সুচিত্রা বলল ,”না , আক্ষেপ হয়না । তবে মাঝে মাঝে মনেহয় , সেদিন যদি তোর সাথে এক কাপ কফি খেতে যেতাম আজ হয়তো জীবনে একটু খুশি থাকতে পারতাম । হয়তো তখনো আমাকে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হত । কিন্তু সেই মানানোটা হত ভালবাসার জন্য মানানো । তোর প্রতি অন্যায় করেছিলাম সেদিন , তাই হয়তো আজ............” কথাটা শেষ হবার আগেই সৌরভ সুচিত্রা কে থামিয়ে দিয়ে বলল , “থাক না ; এই বয়সে এসে কেন আবার ন্যায়-অন্যায় এর অঙ্ক কষা ! যে স্মৃতিগুলো আমার মনের একটা ঘর দখল করে ঘুমিয়ে আছে , সেই ঘরের দরজায় কেন আবার অন্যায় এর নোটিস ঝোলানো ? তারচেয়ে বরং থাক , তাদের ঘুমাতে দে । জীবনের শেষ সময়ে যখন কাজ করার ক্ষমতা হারাবো , তখন তাদের ঘুম থেকে তুলব । খেলব তাদের সাথে ।“ কথাগুলো শুনে সুচিত্রার মনটা ভারি হয়ে গেল । এরপর কথা আগলে হয়তো আর নিজেকে সামলাতে পারবেনা বুঝে সুচিত্রা বলল , “তবে থাক । সমস্ত হিসাব-নিকাশ থাক । সৌরভ সুচিত্রার মনের ভাবটা বুঝতে পারল । সুচিত্রার মনের পরিবেশটা হালকা করতে কথাটা ঘুরিয়ে সৌরভ প্রশ্ন করলো ,”তোর বর কি করে বললিনা তো ?”  একটু হেসে সুচিত্রা উত্তর দিল , “এটাও আজ থাক । আবার যদি কোনোদিন কোনো রাস্তার মোড়ে এভাবে দেখা হয় , সেদিন নাহয় বলবো । কিছু কথা ভবিষ্যৎ এর জন্য তুলে রাখতে হয় । আজ চলি । তোর অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেল । যা তাড়াতাড়ি বাজার করে বাড়ি যা , নাহলে তোর গিন্নী রাগ করবে ।





“ কথাটা শেষ করে চশমা টা একটু নাড়িয়ে নিয়ে এগোতে শুরু করলো সুচিত্রা । কিছু বলা বাকি ছিল সৌরভ এর ।   অন্তত একটি-বার সুচিত্রা কে দেওয়া তার প্রিয় নামটা ধরে ডাকার ইচ্ছা ছিল সৌরভ এর । কিন্তু তারদিকে পিঠ করে এগিয়ে যাওয়া , তিরিশ বছর আগের হৃদয়ের সবথেকে প্রিয় নামটি একটি বারের জন্য মুখে আনতে পারলনা সে । কিচ্ছুক্ষন নীরব মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে পকেট থেকে রুমালটা বার করে ঘোলা হয়ে আসা চোখ দুটো মুছে নিল সৌরভ । তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়াল মাংসর দোকানের দিকে ।

--সন্দীপ চ্যাটাজ্জী




Tags :- bertho premer golpo, prothom premer golpo, valobashar golpo, valobashar choto golpo, love story golpo, free golpo, গলপ, প্রেমের গল্প,, , Premer Golpo, bertho premer golpo, prothom premer golpo, valobashar golpo, valobashar choto golpo, love story golpo, free golpo, গলপ, প্রেমের গল্প,, , Premer Golpo, অমর প্রেমের গল্প

Previous Post
First

post written by:

0 Comments: