Monday 20 April 2020
Wednesday 22 January 2020
Thursday 17 October 2019
রাস্তার মোড়ে
“কিরে.........কেমন আছিস ?”
আচমকা প্রশ্নটা কানে আসায় পিছন ফিরে তাকাল সৌরভ ।
কিছুটা চেনা চেনা লাগলেও পুরোপুরি চিনতে না পারায় কি উত্তর দেবে বুঝতে পারল না সে
। তার মুখের অভিব্যক্তি দেখে হয়তো তার মনের ভাবটা আন্দাজ করেই সুচিত্রা তার পরের
প্রশ্নটা করল, কি চিনতে পারলিনা বুঝি ? এর পরেও চুপ থাকাটা
অভদ্রতামি ভেবে সৌরভ বলল, “না.....মানে কিছুটা
চেনা চেনা লাগছে তবে.......”।
“তোর তোতলামো স্বভাবটা গেলনা দেখছি”, মুচকি হেসে বলল সুচিত্রা । “যখন কলেজে পড়তিস তখনো স্যার কোন প্রশ্ন করলে
এভাবেই তোতলাতিস, মনে পরে ?” হাসতে হাসতে বলল সুচিত্রা । কথাটা শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়েই সুচিত্রার মুখ
থেকে চোখ সরাল সৌরভ । বাবাঃ !! আবার লজ্জা পেতেও শিখেছিস দেখছি!!” বলতে বলতে
খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সুচিত্রা । “তা কেমন আছিস ?” হাসি থামিয়ে বলল
সুচিত্রা । “ভালই আছি“, অন্য দিকে তাকিয়ে
উত্তর টা দিল সৌরভ ।
এরপর তাকে আপনি বলবে নাকি তুমি নাকি তুই এ কথা ভাবতে
ভাবতে পরের প্রশ্নটা আর করতে পারলনা সৌরভ । “আমি কেমন আছি জানতে চাইবিনা ?” আচমকা সুচিত্রার প্রশ্নটায় একটু চমকে উঠল সৌরভ ।“ হ্যাঁ .......মানে
........আমি...... জিজ্ঞাসা করতে জাচ্ছিলাম.......” তখন শুধুমাত্র এটুকু শব্দই বেরোল সৌরভ এর গলা দিয়ে । “থাক থাক জানি কত
জিজ্ঞাসা করতিস “, অভিমান এর সুরে বলল
সুচিত্রা । “ভালই আছি। ছেলে-মেয়ে-স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই আছি“, একটু জোর গলাতেই বলল সুচিত্রা । মুখে ভালো আছি গলা চড়িয়ে বললেও তার চোখে একটু
হতাশার অনুভুতি লক্ষ করলো সৌরভ । এরপর কিছুক্ষন নীরব হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকল দুজনে । নীরবতা ভাঙল সুচিত্রার কথায়; মুখের হতাশার ভাবটা লুকিয়ে সুচিত্রা একটু বাঁকা হাসি হেসে বলল , “অনেক বুড়ো হয়ে গেছিস তো রে ! মাথায় একটু টাক-ও তো পরেছে দেখছি ।“ উত্তরে সৌরভ কেবল একটু অসস্থিকর হাসি হাসল । সেদিকটা লক্ষ করেই সুচিত্রা বলল
, “তা শরীরের আর দোষ কি ! সময় এর সাথে সাথে শরীরেরও তো বয়স হয় । এই যে আমাকে তুই
চিন্তেই পারলিনা ! তার মানে আমিও আর আগের মতো নেই, আমার শরীরেরও সময় এর সাথে সাথে আমুল পরিবর্তন হয়েছে , নাহলে যাকে দিনে-রাতে চোখে হারাতিস তার মুখটা কি এতো সহজে ভুলে যেতে পারতিস
!!”
কথাগুলো বলতে বলতে সুচিত্রার মুখে লুকোনো সেই হতাশার
অনুভুতিটা আবার প্রকট হয়ে উঠল । নিজের লুকোনো অনুভূতিটা সৌরভ এর সামনে প্রকাশ হয়ে
যাচ্ছে বুঝে পরিবেশ পরিবর্তন এর জন্য কিছুটা জোর করেই মুখে হাসি এনে সুচিত্রা বলল, “কলেজের শেষ দিনে তুই আমার থেকে একটা জিনিস চেয়েছিলি, কিন্তু সেদিন আমি তোকে উপেক্ষা করে তোর সাথে কফি খেতে যাইনি । আজ তোর সেদিন এর
ইচ্ছাটা পূরণ করতে ইচ্ছা হচ্ছে । চল এক কাপ কফি খেয়ে আসি ।
সুচিত্রার এই প্রস্তাবের উত্তরে সৌরভ বলল, “মানে........আসলে......হয়েছেকি.....আমার স্ত্রী আজ একটু মাংস........”, কথাটা শেষ করতে হলনা সৌরভ কে । এটুকু শুনেই সুচিত্রা একেবারে হো হো করে হেসে
উঠে হাত নাড়াতে নাড়াতে বলল ,”থাক থাক বুঝেছি , তুই নয় তোর গিন্নিই বাড়ির আসল কর্তা । যাক ছাড়, সেদিন আমার কাছে সময় ছিলনা আজ তোর কাছে সময় নেই । আসি রে । আবার যদি কোনোদিন
দেখা হয় কোনো রাস্তার মোড়ে সেদিন চিনতে পারবি তো তোর তিরিশ বছর আগের সূচি কে ?” নাম টা কানে যেতেই সৌরভ এর মনের কোনো এক গোপন কোনে পড়ে থাকা তিরিশ বছর আগের
সমস্ত ধুলো পড়া স্মৃতি ধুলো ঝেড়ে জ্বলজ্বল করে উঠল । হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা
অচেনা মুখটিতে একটা অতি-পরিচিত মুখের ছাপ লক্ষ্য করলো সৌরভ । তিরিশ বছর আগে মনের
যে ঘরটিতে সৌরভ তার ভালবাসার সব স্মৃতি গুলো তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল , আচমকা সেই ঘরটি খুলে গেল । সৌরভ এর মনেপড়ে গেল তার কলেজের
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা । কলেজের বাগানে দেখা সেই চঞ্চল ছোট্টখাট্টো মেয়েটির
কথা। যার চঞ্চলতাটা প্রথম দেখাতেই সৌরভ এর মনে ভালবাসার ফুল ফুটিয়েছিল । সেদিনের
সেই চুড়িদার পরা চঞ্চল মেয়েটি আজ তার সামনে শাড়ি পরে শান্ত মুখে দাড়িয়ে । কোন
হারানো জিনিস খুঁজে পেলে যতটা আনন্দ হয় , হয়তো তার থেকেও একটু বেশি হল সৌরভ এর । যার ছাপ পড়ল তার মুখের অভিব্যক্তিতে ।
হয়তো বয়সের কথাটা মাথায় রেখেই নিজেকে একটু সংযত করে নিয়ে প্রশ্নটা করলো সৌরভ ,”তুইতো অনেকটা বদলে গেছিস !” সৌরভ এর মুখের ভাবটা লক্ষ্য করে , তার প্রশ্নের উত্তরে সুচিত্রা বলল ,”যাক , নামটা মনে রেখেছিস তাহলে !